ঢাকা ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জজ মিয়া স্বাবলম্বী হলেন, অন্যদেরও বদলালেন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৪৭:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২০
  • ২১৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুনামগঞ্জ জেলার ভাটির জনপদগুলোতে ইরি, বোরো ধান উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত হলেও এখানকার কৃষকরা শাকসবজির জন্য দক্ষিণাঞ্চলের ওপরই নির্ভরশীল ছিলো। তবে সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষে আশানুরূপ ফল পেয়েছেন। তাই তারা সারাবছরই পতিত জমিতে অধিক হারে ফসল চাষের পর শাকসবজি উৎপাদনের দিকেও ঝুঁকছেন কৃষকরা।

তাহিরপুর উপজেলার একজন সফল চাষি মো. জজ মিয়া। তিনি বাদাঘাট ইউপির কামড়াবন্দ গ্রামের আশূ মিয়া ছেলে। নিজের জমি ছিলো না। তাই বলে থেমে যাননি। নিজের ভাগ্য পরির্বতনের জন্য দীর্ঘ নয় বছর ধরে সবজি চাষ করছেন। আর এতে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অনেকের জন্যই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

এ লক্ষ্যে বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানার ভেতর পতিত জমি লিজ নিয়ে সাড়ে তিন কিয়ারের বেশি (এক একর ২০ শতাংশ) জমিতে ফলাচ্ছেন সিম, মুলা, লাউ, কচু, মরিচ, বরবটিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। এসব চাষ করে তিনি দুই ছেলে চার মেয়ে নিয়ে বেশ সুখেই আছেন। ছেলে-মেয়েদের স্কুলের লেখাপড়াসহ সবই চলছে এই সবজি বিক্রির টাকায়। আর এসব ফলাতে প্রতি বছর প্রায় লাখ টাকা খরচ হয়। আর প্রতি বছর উৎপাদিত সবজি দুই থেকে আড়াই লাখ বিক্রি করেন।

কৃষক জজ মিয়া জানান, সবজি চাষে পানি, নিরানীসহ সবকিছু একাই করেন। মাঝে মধ্যে ছেলে-মেয়ে আর বউ সহযোগিতার হাত বাড়ান। উপজেলার বড়দল উত্তর ইউপির আমতৈল, পুরানঘাট, ব্রাক্ষনগাও, পৈলনপুর, বারহাল, শিমুলতলা ও বাদাঘাট ইউপির মোল্লাপাড়া, কামরাবন্দ, নাগরপুরসহ অনেক গ্রামের কৃষক তাকে অনুসরণ করেছেন। অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ ও বেকার যুবক তাদের নিষ্ফলা জমিতে বারো মাস সিম, ফুলকপি, টমেটো, করলা, বরবটি, শসা, মিষ্টিকুমড়াসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, উপজেলার অন্য জায়গার চেয়ে এই জায়গা অনেকটা উঁচু হওয়ায় কম খরচে শাকসবজি চাষাবাদ করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করা যায়। অনেকটাই কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ছাড়াই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এখানে লাল শাক, মুলা, লাউ, করলা, বেগুন, শসা, সিম, বরবটি, বাধাকপি, ফুলকপি, আলু, পুঁই শাক, কুমড়া, তরমুজসহ বিভিন্ন প্রজাতির শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ করছি। ধান উৎপাদনের চেয়ে সবজি চাষ সহজ ও ব্যয় কম। বিভিন্ন প্রজাতির শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি বিক্রি করে লাভবান হয়েছি।

জজ মিয়া জানান, যাতায়াতের সুব্যবস্থা না থাকায় বাজার দর সম্পর্কে অবহিত হতে পারছেন না কৃষকরা। এর কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে শাকসবজি পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গুটি কয়েক পাইকারদের দামের মধ্যেই তাদের সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে উপজেলায় শাকসবজি উৎপাদনের পরিমাণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ-দোল্লা বলেন, উপজেলার সাতটি ইউপির ১১শ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা হলেও ১৫শ হেক্টর চাষ হয়েছে। উপজেলার বাদাঘাট ও উত্তর বড়দল ইউপিতে এবার বেশি সবজি চাষ হয়েছে। উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তরা মাঠে গিয়ে কৃষকদের পাশে থেকে দেখাশুনা করছেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা কৃষকদের বিষমুক্ত সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করাসহ কিভাবে সবজি চাষ ও পরিচর্যা করে লাভ হবে, সে সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছি। কম খরচে সবজি চাষে বেশি লাভবান হওয়ায় সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জজ মিয়া স্বাবলম্বী হলেন, অন্যদেরও বদলালেন

আপডেট টাইম : ০৩:৪৭:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুনামগঞ্জ জেলার ভাটির জনপদগুলোতে ইরি, বোরো ধান উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত হলেও এখানকার কৃষকরা শাকসবজির জন্য দক্ষিণাঞ্চলের ওপরই নির্ভরশীল ছিলো। তবে সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষে আশানুরূপ ফল পেয়েছেন। তাই তারা সারাবছরই পতিত জমিতে অধিক হারে ফসল চাষের পর শাকসবজি উৎপাদনের দিকেও ঝুঁকছেন কৃষকরা।

তাহিরপুর উপজেলার একজন সফল চাষি মো. জজ মিয়া। তিনি বাদাঘাট ইউপির কামড়াবন্দ গ্রামের আশূ মিয়া ছেলে। নিজের জমি ছিলো না। তাই বলে থেমে যাননি। নিজের ভাগ্য পরির্বতনের জন্য দীর্ঘ নয় বছর ধরে সবজি চাষ করছেন। আর এতে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অনেকের জন্যই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

এ লক্ষ্যে বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানার ভেতর পতিত জমি লিজ নিয়ে সাড়ে তিন কিয়ারের বেশি (এক একর ২০ শতাংশ) জমিতে ফলাচ্ছেন সিম, মুলা, লাউ, কচু, মরিচ, বরবটিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। এসব চাষ করে তিনি দুই ছেলে চার মেয়ে নিয়ে বেশ সুখেই আছেন। ছেলে-মেয়েদের স্কুলের লেখাপড়াসহ সবই চলছে এই সবজি বিক্রির টাকায়। আর এসব ফলাতে প্রতি বছর প্রায় লাখ টাকা খরচ হয়। আর প্রতি বছর উৎপাদিত সবজি দুই থেকে আড়াই লাখ বিক্রি করেন।

কৃষক জজ মিয়া জানান, সবজি চাষে পানি, নিরানীসহ সবকিছু একাই করেন। মাঝে মধ্যে ছেলে-মেয়ে আর বউ সহযোগিতার হাত বাড়ান। উপজেলার বড়দল উত্তর ইউপির আমতৈল, পুরানঘাট, ব্রাক্ষনগাও, পৈলনপুর, বারহাল, শিমুলতলা ও বাদাঘাট ইউপির মোল্লাপাড়া, কামরাবন্দ, নাগরপুরসহ অনেক গ্রামের কৃষক তাকে অনুসরণ করেছেন। অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ ও বেকার যুবক তাদের নিষ্ফলা জমিতে বারো মাস সিম, ফুলকপি, টমেটো, করলা, বরবটি, শসা, মিষ্টিকুমড়াসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, উপজেলার অন্য জায়গার চেয়ে এই জায়গা অনেকটা উঁচু হওয়ায় কম খরচে শাকসবজি চাষাবাদ করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করা যায়। অনেকটাই কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ছাড়াই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এখানে লাল শাক, মুলা, লাউ, করলা, বেগুন, শসা, সিম, বরবটি, বাধাকপি, ফুলকপি, আলু, পুঁই শাক, কুমড়া, তরমুজসহ বিভিন্ন প্রজাতির শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ করছি। ধান উৎপাদনের চেয়ে সবজি চাষ সহজ ও ব্যয় কম। বিভিন্ন প্রজাতির শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি বিক্রি করে লাভবান হয়েছি।

জজ মিয়া জানান, যাতায়াতের সুব্যবস্থা না থাকায় বাজার দর সম্পর্কে অবহিত হতে পারছেন না কৃষকরা। এর কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে শাকসবজি পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গুটি কয়েক পাইকারদের দামের মধ্যেই তাদের সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে উপজেলায় শাকসবজি উৎপাদনের পরিমাণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ-দোল্লা বলেন, উপজেলার সাতটি ইউপির ১১শ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা হলেও ১৫শ হেক্টর চাষ হয়েছে। উপজেলার বাদাঘাট ও উত্তর বড়দল ইউপিতে এবার বেশি সবজি চাষ হয়েছে। উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তরা মাঠে গিয়ে কৃষকদের পাশে থেকে দেখাশুনা করছেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা কৃষকদের বিষমুক্ত সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করাসহ কিভাবে সবজি চাষ ও পরিচর্যা করে লাভ হবে, সে সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছি। কম খরচে সবজি চাষে বেশি লাভবান হওয়ায় সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা।